শাড়ি পরা একটি ঐতিহ্যবাহী পোশাক, যা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীদের সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলে। শাড়ি এমন একটি পোশাক, যা বিভিন্নভাবে পরলে আপনার সৌন্দর্য আরও ফুটে উঠতে পারে। নিচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হলো, কিভাবে শাড়ি পরলে আপনাকে আরও সুন্দর লাগবে:
১. শাড়ির ধরনের সাথে শরীরের গঠন অনুযায়ী বাছাই করুন
প্রথমেই আপনার শরীরের গঠন অনুযায়ী শাড়ি নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ। শাড়ি বিভিন্ন ধরনের হয়, যেমন:
কটন শাড়ি: দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এটি ভালো, বিশেষ করে গরমের দিনে। হালকা আরামদায়ক হওয়ায় এটি শারীরিকভাবে আপনাকে স্বাচ্ছন্দ্য দেবে।
সিল্ক শাড়ি: বিয়ের অনুষ্ঠান বা উৎসবে সিল্ক শাড়ি পরলে বেশ রাজকীয় লুক পাওয়া যায়। এটি আপনাকে অনেক বেশি সৌন্দর্যময় করে তুলতে পারে।
জর্জেট বা শিফন শাড়ি: হালকা এবং সহজে ড্রেপ করা যায় বলে এগুলো আপনাকে সুন্দর ও স্টাইলিশ লুক দিতে পারে। যারা একটু লম্বা ও চিকন, তাদের জন্য এই ধরনের শাড়ি উপযুক্ত।
২. প্লিটিং এবং ড্রেপিং স্টাইল
শাড়ি পরার স্টাইল বা ড্রেপিং অনেকটাই আপনার লুক নির্ধারণ করে।
চমৎকার প্লিটিং: শাড়ির কোমরের অংশে পরিপাটি করে প্লিট করতে হবে, এতে আপনার শরীরের আকৃতি সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে।
নটধারা স্টাইল: নটধারা বা খুলনার শাড়ি পরার স্টাইল আপনার ব্যক্তিত্বকে আরও উজ্জ্বল করতে পারে। এই স্টাইলটিতে শাড়ির আঁচল একটু বড় করে ড্রেপ করুন।
লো হাফ ড্রেপিং: যদি আপনি লম্বা হন, তবে হাফ ড্রেপিং স্টাইলটি আপনার জন্য আদর্শ। এতে আপনার উচ্চতা আরও ফুটে উঠবে এবং স্টাইলিশ লাগবে।
৩. ব্লাউজের ডিজাইন নির্বাচন
শাড়ির সৌন্দর্য অনেকাংশে নির্ভর করে ব্লাউজের ডিজাইনের ওপর।
ফিটিং ব্লাউজ: ফিটিং ব্লাউজ আপনার লুককে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে পারে।
ব্লাউজের হাতার স্টাইল: ফুল স্লিভ, স্লিভলেস, কেপ স্লিভ বা বেল স্লিভ যেকোনো স্টাইল নির্বাচন করতে পারেন, যা আপনার শাড়ি এবং শরীরের সাথে মানানসই।
ব্যাক ডিজাইন: ব্লাউজের পেছনের অংশে নকশা করা থাকলে বা ডিপ কাট থাকলে তা আপনার শাড়িকে আরও স্টাইলিশ করে তুলবে।
৪. গয়না এবং এক্সেসরিজ
শাড়ির সাথে মানানসই গয়না আপনার সৌন্দর্য দ্বিগুণ করে তুলতে পারে।
ঝুমকা বা বড় দুল: শাড়ির সাথে মানানসই ঝুমকা বা বড় দুল পরলে আপনার লুক আরও আকর্ষণীয় হবে।
ম্যাঙ্গ টিকা বা মাথার গয়না: যদি আপনি ঐতিহ্যবাহী স্টাইল চান, তাহলে মাথার টিকলি বা নাথ পরতে পারেন, যা আপনাকে একটি বিশেষ লুক দেবে।
হাতের চুড়ি এবং ব্যাঙ্গেল: সোনার চুড়ি বা মেটাল ব্যাঙ্গেল শাড়ির সাথে বেশ মানানসই হয়।
৫. সঠিক হেয়ারস্টাইল
হেয়ারস্টাইল আপনার সম্পূর্ণ লুককে বদলে দিতে পারে। শাড়ির সাথে মানানসই হেয়ারস্টাইলের জন্য কিছু পরামর্শ:
বেণি বা খোঁপা: শাড়ির সাথে সাধারণত বেণি বা খোঁপা বেশি মানানসই হয়, বিশেষ করে যদি আপনি সিল্ক বা বেনারসি শাড়ি পরেন।
খোলা চুল: জর্জেট বা শিফনের শাড়ির সাথে খোলা চুলে আপনার লুক আরও কনটেম্পোরারি লাগবে।
৬. মেকআপের গুরুত্ব
সাজসজ্জা শাড়ির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।
নুড মেকআপ: যদি আপনি দিনের বেলা শাড়ি পরেন, তবে হালকা নুড মেকআপ বেছে নিতে পারেন।
গর্জিয়াস লুক: রাতের কোনো অনুষ্ঠান হলে গর্জিয়াস লুকের জন্য গাঢ় লিপস্টিক এবং স্মোকি আই মেকআপ করতে পারেন।
৭. সঠিক শাড়ির পেটিকোট এবং ইনসাইড ওয়্যার
শাড়ির নিচে ভালো মানের পেটিকোট পরা জরুরি। পেটিকোট যদি সঠিকভাবে ফিট না করে, তাহলে আপনার শাড়ি ঠিকভাবে ড্রেপ হবে না এবং লুক নষ্ট হবে। সুতরাং, পেটিকোটের ফিট এবং কাপড়ের মান অবশ্যই ভালো হতে হবে।
৮. সেলফ কনফিডেন্স
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আত্মবিশ্বাস। আপনি কেমন শাড়ি পরছেন তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনি কীভাবে সেই শাড়ি ক্যারি করছেন। আত্মবিশ্বাসের সাথে শাড়ি পরলে, তা আপনার ব্যক্তিত্ব এবং সৌন্দর্যকে আরও উজ্জ্বল করবে।
শাড়ি পরা যেমন শিল্প, তেমনি এটি আপনার ব্যক্তিত্বকে ফুটিয়ে তোলার একটি মাধ্যম। শাড়ির ধরন, রঙ, ড্রেপিং স্টাইল এবং অ্যাকসেসরিজের মাধ্যমে আপনি নিজেকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে পারেন।